আদম তমিজী হক
দীর্ঘ বিদেশ সফর শেষ করে দেশে ফিরেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । দেশে ফিরে বৃহস্পতিবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী । সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সাথে সাথে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ রুপরেখা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মরিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ‘বিএনপি’র মিথ্যাচার ও বিদেশীশক্তির কাছে মাথানত করার প্রবণতার সমালোচনা করেন ।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন , বিএনপির খুঁটিতে জোর নেই । সত্যি বলেছেন প্রধানমন্ত্রী । যে কোন দলের খুঁটি হচ্ছে জনসমর্থন । বিএনপি জনগণের সেই আস্থার সংকটে ভুগছে । কারণ দেশের মানুষ এখনও বিএনপির পূর্ববর্তী দুঃশাসন ভুলে যায় নি । ভুলে যায় নি সংখ্যালঘুরা বিভিন্ন উছিলায় তাদের উপর নিপীড়নের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা । সেই কারণেই দেশের মানুষের ভোটে ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়ে বিএনপি নিজেরাই সন্দিহান । তারা এখন আবার পায়তারা করছে জ্বালাও-পোড়াও এর রাজনীতিতে ফিরে যাওয়ার । আর প্রতি সপ্তাহে ধর্না দিচ্ছে বিদেশী কোন রাষ্ট্রদূতের দরবারে । যে চেষ্টা আগেও করেছে দলটি । কিন্তু সফল হয় নি । এবারেও হবে না ।
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ । ভোটের মাধ্যমেই এই দেশের ক্ষমতার ফয়সালা হবে । কোন বিদেশী শক্তি কাউকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না , দিতে পারবে না । এটা বুঝতে হবে বিএনপিকে । আর দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করলেও তাদের কঠোরহস্তে দমন করার ক্ষমতা বর্তমান সরকারের রয়েছে , মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় সেই বার্তা ছিল স্পট ।
আসলে জন্মলগ্ন থেকেই ভুল রাজনীতিতে চলা বিএনপি সাধারণ মানুষের ‘পালস’ বুঝতে পারছে না । জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে সামরিক ক্যু করে এই দলের সৃষ্টি । তিনিই বাংলাদেশে প্রচলন করেন ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের প্রহসন । সেই প্রহসন থেকে বেরিয়ে বর্তমান গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতি তাদের ভাল না লাগারই কথা । কিন্তু তাদের ভাল লাগা , না লাগায় কিছু আসে যায় না । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট উচ্চারণ , বর্তমান গণতান্ত্রিক ধারাতেই হবে আগামী নির্বাচন । এতে বিএনপি যদি আবারও নির্বাচনে না আসে , তবু যথাসময়ে নির্বাচন হবে । কিন্তু তাদের কোন অন্যায় দাবীর কাছে মাথানত করে দেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক চর্চাকে ব্যহত হতে দেবে না আওয়ামি লীগ ।
শেখ হাসিনা নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও দ্বিধাহীন কণ্ঠে ঘোষণা দেন , দেশের উন্নয়নের জন্য জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি কাজ করছেন। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামি লীগ ক্ষমতায় আছে । এই ক্ষমতা জোর করে দখল করা নয় । আওয়ামি লীগ দেশের একমাত্র দল যারা প্রতিবার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে , সাধারণের ভোটে । এখন জনগণ চাইলে তিনি যে কোন মুহূর্তে ক্ষমতা থেকে সরে যেতেও প্রস্তুত । বিদায়ের আগে নিজের প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিতে পেরেছেন এটাই পরম পাওয়া– বলে জানান দেন শেখ হাসিনাও। এতে করে তাঁর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিচয় প্রকটিত হয়। যদিও বাংলাদেশ শেখ হাসিনায় আস্থা রাখে, তিনি চাইলেও দেশের মানুষ তাঁকে রাজনীতিতে দেখতে চায়, দেশের কান্ডারি হিসাবে তাঁর বিকল্প নেই, তা মানুষ বোঝে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিএনপির জন্য বার্তা স্পষ্ট । তাদের বিদেশীশক্তি নির্ভরতা ছাড়তে হবে । গণমুখী হতে হবে । অতীতের জ্বালাও-পোড়াও আর সংখ্যালঘু নিপীড়নের দায়ে ক্ষমা চেয়ে সুস্থ ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসতে হবে । এছাড়া আসলে বিএনপি’র টিকে থাকার কোন পথ নেই । আর অবশ্যই নিজেদের গণতন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাসী হিসেবে নির্বাচনমুখী হতে হবে । আস্থা রাখতে হবে নির্বাচন কমিশনের উপর । হেরে গেলেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে নিজেদের হেয় প্রতিপন্ন করা থেকে বিরত থাকতে হবে । তাতে একটা সময় বিএনপি চলে আসতে পারবে মানুষের আস্থার জায়গায় । নতুন প্রজন্মের কাছেও সৃষ্টি হবে তাদের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি । নতুবা একদিন বিএনপিকে দেউলিয়া হয়ে যেতে হবে । মানুষের কাছে তাদের পরিচিতি হবে স্রেফ নামসর্বস্ব একটি দল হিসেবে, খুব খারাপ কিছুর উদাহরণ রাখলে নেতিবাচক শক্তি বা রাজনৈতিক অপশক্তি হিসাবে তারা তকমা পাবে বলে মনে করার সুযোগ আছে।
লেখক- রাজনীতিবিদ , সমাজকর্মী
Leave a Reply