নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ঢাকায় ফিরতে নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা পিকআপভ্যান
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর বাসিন্দা জান্নাতারা। কাজ করেন ঢাকার একটি পোশাক কারখানায়। পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে মঙ্গলবার (১৮ মে) দুপুরে আবারও ফিরছেন কর্মস্থলে। ঢাকার অভিমুখে মাধারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে ফেরিতে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছেই বিপাকে পড়েন এই নারী।
লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সড়কে নেই দূরপাল্লার বাস। অটোরিকশা বা সিএনজিতে দু-তিনগুণ বেশি ভাড়া, এরপরও আছে সঙ্কট। তাই অতিরিক্ত ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না তার। উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ছোট মেয়েকে নিয়ে ঢাকার নয়াবাজার পর্যন্ত জন প্রতি ১০০ টাকা ভাড়ায় ওঠেন একটি পিকআপভ্যানে। সাধ্যের মধ্যে যে করেই হোক পৌঁছাতে হবে কর্মস্থলে।
শুধু এই জান্নাতারাই নন, গণপরিবহন সঙ্কট আর অধিক ভাড়ার কবলে বাধ্য হয়ে শতশত মানুষ পণ্যবাহী পিকআপভ্যানে কর্মস্থলে যাচ্ছেন। যারা বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ।
মঙ্গলবার শিমুলিয়া ঘাটে প্রতিটি ঢাকামুখী পিকআপভ্যানে দেখা যায় যাত্রীদের গাদাগাদি। একেকটিতে ছিল ২০-২৫ জন যাত্রী।
ভাড়ার বিষয়ে জান্নাতারা বলেন, ‘বড়লোকগো গাড়ি আছে, তারা গাড়ি করে বাড়ি আসে যায়। আমরা যারা দিন আনি দিন খাই তাদের তো এতো টাকা খরচ করা উপায় নাই। পিকআপে উঠছি, এই গাড়িই ভরসা। বাস থাকলে আমাদের সমস্যা হতো না, ডাইরেক্ট গোপালগঞ্জ থেইকা ঢাকা যাইতে পারতাম। সিএনজি অটোরিকশায় যাইতে যে টাকা লাগে আমাগো এতো বেশি খরচ করার সাধ্য নাই। আমাগো এতো ভোগান্তির দেয়ার কী দরকার।’
ইউসুফ গাজী নামের আরেকজন বলেন, ‘একটি হোটেলে কাজ করি। ঈদ শেষে তেমন টাকাও নেই আমাদের। গরীবের জন্যই যত দুর্ভোগ। এইযে সবাই একসঙ্গে যাইতাছি, এখন কী করোনা হয় না আমাদের।’
সাগর হোসেন নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘লকডাউনতো কেউ মানতাছে না। সবকিছুই তো খোলা, বাস খুলে দিলে আমাদের গরীব মানুষের হয়রানি কমতো।’
সালেহা বেগম বলেন, ‘ঈদে বাড়িত গেলাম কষ্ট করে, এখন ঢাকায় যামু তাও কষ্ট। টাকা থাকলে তো গাড়ি ভাড়া করেই যাইতাম। আমাগো টাকা নাই, তাই আমাগো কথা কেউ শুনে না।
পিকআপ চালক মো. সজল বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দুবার গেছি ঢাকা। এবার নিয়ে তিনবার যাব। ২০ জন যাত্রী নিলেই ছাইড়া দেই। তয় যাত্রীরা উঠতেই থাকে।’
আরেক চালক ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘যারা সিএনজি আর রিজার্ভ গাড়িতে উঠেতে পারে না তারাই আমাগো গাড়িতে উঠে। মানুষও কম টাকায় যাইতে পারতাছে আমরাও কিছু টাকা পাইতাছি।’
এ বিষয়ে মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক যাত্রী পিকআপভ্যানে যাচ্ছেন, তাদের কম টাকা খরচ হচ্ছে। তবে যাত্রীরা গাদাগাদি করে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি একেবারেই উপেক্ষিত এসব যানবাহনে। এতে যাত্রীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব না থাকায় সংক্রমণে আশঙ্কা প্রবল।’
Leave a Reply